ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

৪০০ গাছ কেটে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা জাবি প্রশাসনের

  প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৪  
আপডেট :
 ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪১

৪০০ গাছ কেটে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা জাবি প্রশাসনের
ছবি : সংগৃহীত

বিগত কয়েক বছরের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে গরমের দাপটে দেশ বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে । চলতি গ্রীস্ম মৌসুমে তীব্র গরমে নাজেহাল মানুষসহ অন্যান্য জীবজন্তুরাও। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে গাছ লাগানোকে একমাত্র উপায় বলে জানিয়েছেন দেশের পরিবেশবিদরা। তাদের ভাষ্য, দেশের সবুজ বনায়ন বাড়াতে বৃক্ষরোপন শুরু করলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই পরিস্থিতির বদল হবে। গরমের তীব্রতা কমে আসবে। গরম থেকে গাছই যখন পরিবেশ রক্ষা করে, ঠিক এমন সময় ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় ৪০০ গাছ কাটার প্রস্তুতি নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন।

জানা গেছে, চারুকলা অনুষদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনি হলের বর্ধিতাংশের জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই জায়গাগুলোয় ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় ৪০০ গাছ কাটার বন্দোবস্ত করেছে। পাশাপাশি চারুকলা ভবনের জন্য বরাদ্দ করা জায়গা অতিথি পাখির ‘ফ্লাইং জোন’ হিসেবে পরিচিত।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, সারা বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অংশ হিসেবে বাদ নেই আমরাও। বাংলাদেশে মনুষ্যসৃষ্ট কারণ যেমন: গাছপালা কেটে ফেলা, বন উজাড় করা, গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলাশয় ভরাটের কারণে দিন দিন তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের এমন সিদ্ধান্ত অবাক করার মতো।

এর মধ্যেই চারুকলা অনুষদের ভবন, গাণিতিক ও পদার্থবিদ্যা বিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন ও জীববিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য টিনের ঘেরাও দিয়েছে প্রশাসন বলেও জানা গেছে।

ভবন নির্মানের জন্য আহ্বান করা দরপত্র থেকে জানা যায়, জীববিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য ৪৮ কোটি, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য ৫৮ কোটি ও চারুকলা অনুষদের জন্য ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জীববিজ্ঞান অনুষদ ও গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে আর চারুকলা অনুষদ ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে।

জীববিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণাগারের বিপরীতে এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য পদার্থবিজ্ঞান ভবনের পাশের জলাশয়ের জায়গা বরাদ্দ করেছে প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত হচ্ছে ১০ তলাবিশিষ্ট লেকচার থিয়েটার হল কাম এক্সামিনেশন হল। নির্মিতব্য এই লেকচার থিয়েটারে ৬২টি সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ থাকবে, যাতে একসঙ্গে ১০০ জন শিক্ষার্থী বসতে পারবেন। প্রতিটি ক্লাসরুমে ওয়াল র‍্যাক থাকবে, যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাপটপ ও অন্যান্য পাঠ-প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা যাবে। আরও থাকবে ১০টি ল্যাব, যা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অন্য শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারবে। নির্মাণাধীন লেকচার থিয়েটার দুটি চালু হলে ক্লাস রুম সংকটের পাশাপাশি ল্যাব সংকট ও দূর হবে। কেবল বরাদ্দ থাকায় নতুন ভবন নির্মাণ করাকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

অপরিকল্পিত উন্নয়নের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, তারা মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া কাজ শুরু করতে চায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই। কারণ তারা লুকোচুরি করে কাজ শুরু করতে পারলে তাদের কোনও স্টেকহোল্ডারদের কাছেই জবাবদিহি করতে হয় না। লেকচার থিয়েটার হলে ৬২টি ক্লাসরুমে প্রতি ঘণ্টায় ৬ হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারবে। তারপরও তিনটি অনুষদের এক্সটেনশন বিল্ডিং তাদের দরকার।

তিনি আরও বলেন, যেখানে দ্বিতীয় রেজিস্ট্রার ভবনটাই পূর্ণাঙ্গ করা যায় মাত্র ৪০ কোটি টাকায়, সেখানে কিছু তোয়াক্কা না করে প্রশাসন ‍তৃতীয় প্রশাসনিক ভবন করতে চায়। কারণ অর্থ অপচয় করে পকেট ভারী করা যায়। ফলে প্রকল্প অফিস হয়ে গেছে জাহাঙ্গীরনগরে দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। টাকা আসছে টাকা খরচ করতে হবে, ভাগবাঁটোয়ারা করতে হবে—তারা আছে এই নীতিতে। যে কারণে মাস্টারপ্ল্যানের তোয়াক্কা না করে এ রকম ধ্বংসাত্মক ক্যাম্পাস তৈরি করছে। দীর্ঘমেয়াদি প্ল্যান করে যদি এই কাজগুলো হতো, তাহলে আমাদের তাতে কোনও বাধা থাকতো না। এই পরিস্থিতি বড় কোনও আন্দোলনের দিকেই আমাদের নিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত